অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ সর্বশেষ

আফিফ-মিরাজের দুর্দান্ত জুটিতে অবিস্মরনীয় জয় বাংলাদেশের

আফিফ-মিরাজের দুর্দান্ত জুটিতে অবিস্মরনীয় জয় বাংলাদেশের

আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান  মিরাজের অসাধারন নৈপুণ্যে  আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে  সিরিজ শুরু করলো  বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আগে ব্যাট করা আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ২১৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় সপ্তম উইকেট জুটিতে ২২৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রান যোগ করে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেন  আফিফ-মিরাজ। খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে  শেষ পর্যন্ত সাত বল হাতে রেখেই  ৪ উইকেটে স্মরণীয় এক এ জয় এনে দেন তারা। ফলে এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে  এগিয়ে গেল স্বাগতিক বাংলাদেশ।

এই জয়ে বিশ^কাপ সুপার লিগে ১৩ খেলা শেষে ৯ জয় ও ৪ হারে ৯০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে থাকলো বাংলাদেশ। ১৫ ম্যাচে ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সবার উপরে ইংল্যান্ড। আর ৭ ম্যাচে ৬ জয় ও ১ হারে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে থাকলো আফগানিস্তান। সুপার লিগে আজই প্রথম হারের স্বাদ নিলো আফগানরা।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় আফগানিস্তান। বল হাতে নিয়ে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে শিকার করেন সদ্য শেষ বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ফিজ। মিড উইকেটে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবালকে ক্যাচ দেন ৭ রান করা গুরবাজ।

ষষ্ঠ ওভারে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দিতে পারতেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগে আফগানদের আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানের ক্যাচ ফেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। জীবন পেয়ে তাসকিনের করা চতুর্থ ওভারে পরপর দুই বলে একটি করে চার-ছক্কা মারেন জাদরান। তবে ১৪তম ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে স্লিপে থাকা ইয়াসির আলিকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২৩ বলে ১৯ রান করা ইব্রাহিম। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহর সাথে ৬৫ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম।

উইকেটে সেট হয়ে আফগানিস্তানের সচল রেখেছিলেন রহমত ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। তবে দলীয় ১০২ রানের মধ্যে এই দুই সেট ব্যাটারকে ফেরান তাসকিন ও মাহমুদুল্লাহ। নিজের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে রহমতকে ৩৪ রানে থামান তাসকিন। আউট হওয়ার আগে ৬৯ বল খেলে ৩টি চার মারেন রহমত।

আর ২৮তম ওভারে প্রথমবারের মত বল করতে এসেই সাফল্যের দেখা পান মাহমুদুল্লাহ। ঐ ওভারের শেষ বলটি কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়া  শাহিদি করেন ২৮ রান।

২৮ ওভার শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১০২। রান রেট ছিলো- ৩ দশমিক ৬৪। এমন অবস্থায়  রানের গতি বাড়াতে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবি।

জাদরান-নবির জুটি ভাঙ্গতে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বোলিংয়ে পরিবর্তন করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম। কিন্তু নাজিবুল্লাহ-নবির দৃঢ়তায় ৩৭তম ওভারে আফগানিস্তান রান দেড়শ স্পর্শ করে। তবে ৩৯তম ওভারে আক্রমনে এসে দলকে দারুন এক ব্রেক-থ্রূ এনে দেন তাসকিন। কভার দিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২০ রান করা নবি। নবি-জাদরান পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬৩ বলে ৬৩ রানের সংগ্রহ পায় সফরকারীরা।

৪৩তম ওভারে নাজিবুল্লাহ তার হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেতে ৭০ বল খেলেছেন জাদরান।

বল হাতে বাংলাদেশের চার বোলার উইকেট পেলেও এ পর্যন্ত উইকেট শুন্য ছিলেন দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। অবশেষে ৪৫তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন সাকিব। ঐ ওভারের তৃতীয় বলে গুলবাদিন নাইবকে ১৭ রানে ও শেষ বলে রশিদ খানকে শুন্য রানে ফিরিয়ে দেন   তিনি। নিজের নবম ওভারে এসে প্রথম উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন সাকিব। এতে ৪৫ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৯৪ রানে পরিণত হয় আফগানরা।

শেষদিকে উইকেটে সেট ব্যাটার জাদরানসহ আফগানদের টেল-এন্ডারদের ছেঁটে ঠেলেন মুস্তাফিজ ও শরিফুল। ফলে ৪৯ দশমিক ১ ওভারে ২১৫ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। আফগানদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা জাদরানকে ৬৭ রানে থামান শরিফুল। ৮৪ বল খেলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন জাদরান।

আর মুজিব উর রহমানকে শুন্য ও ইয়ামিন আহমদজাইকে ৫ রানে আউট করেন মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের পক্ষে মুস্তাফিজ ৩৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। এছাড়া তাসকিন-সাকিব-শরিফুল ২টি করে উইকেট নেন। ১ ওভার বল করে ১ উইকেট নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ।

জয়ের জন্য ২১৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে  অধিনায়ক তামিম ইকবালের দুই বাউন্ডারির কল্যানে  প্রথম ওভারেই ১২ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

কিন্তু তৃতীয় ওভারেরই  হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় স্বাগিতক শিবির।  রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে বিদায় করে আফগানিস্তান।

ওভারের তৃতীয় বলে আফগানিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার ফজলহক ফারুকির ডেলিভারি খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন লিটন। বল চলে যায় আফগান উইকেটরক্ষক রাহমানউল্লাহ গুরবাজের হাতে। আফগানিস্তানের আউটের আবেদনে সাড়া দেয়নি নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। তবে রিভিউতে দেখা যায়, বল লিটনের ব্যাট স্পর্শ করেছিলো। ১ রান করে আউট হন লিটন।

একই ওভারের পঞ্চম বলে তামিমের বিপক্ষে লেগ বিফোর আউটের আবেদন করে আফগানিস্তান। কিন্তু নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ারের সেই আবেদনে সাড়া দেননি। এবারও রিভিউ নেয় আফগানিস্তান। রিভিউতে তাদের পক্ষে গেলে  বিদায় ঘটে  ৮ রান করা তামিমের।

জোড়া আঘাতে শুরুতেই বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন ফারুকি। সেই চাপ ডাবল করেন ফারুকি। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আবারও দুই উইকেট নেন তিনি। প্রথম বলে মুশফিকুর রহিমকে লেগ বিফোর আউট করেন ফারুকি। নিজের উইকেট বাঁঁচাতে রিভিউ নেন মুশফিক। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না তার। ৩ রান করে আউট হন মুশি।

আর ঐ ওভারের শেষ বলে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ইয়াসিরকে বোল্ড করেন ফারুকি। ৫ বল খেলে রানের খাতা খোলার  আগেই  ইয়াসির আউট হলে ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ।

সাকিব-মাহমুদুল্লাহ থাকায়, ঘুড়ে দাঁড়ানোর আশায় ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিবকে ১০ রানের বেশি করতে দেননি আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব উর রহমান। সাকিবকে বোল্ড করেন সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে একই দলে খেলা মুজিব।

দলীয় ২৮ রানে সাকিবের আউটের পর ক্রিজে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গী হন আফিফ হোসেন। দু’জনের ব্যাট থেকে দু’টি চারও আসে। মাহমুদুল্লাহ-আফিফের কাছ থেকে বড় জুটির প্রত্যাশায় ছিলো বাংলাদেশ। কারন স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে তারই ছিলেন শেষ জুটি। কিন্তু ১২তম ওভারে রশিদ খানের স্পিন সামলাতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৭ বলে ৮ রান করা মাহমুদুল্লাহ।

ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ যখন ফিরেন তখন বাংলাদেশের স্কোর ৪৫। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কত রানে অলআউট হয়, সেটিই মূখ্য বিষয় ছিলো। কিন্তু হাল ছাড়েননি আফিফ ও আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা মিরাজ। আফগানিস্তানের আত্মবিশ^াসী বোলিংয়ের সামনে বুক উঁিচয়ে লড়াই শুরু করেন আফিফ-মিরাজ।

আহমাদজাইর করা ১৭তম ওভার থেকে ১৫ রান তুলে নেন আফিফ-মিরাজ। মিরাজ ২টি চার ও আফিফ ১টি ছক্কা মারেন। ২১তম ওভারে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি ও ২২তম ওভারে দলের রান সেঞ্চুরিতে পৌঁছায়।

৩১তম ওভারে আট  ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন আফিফ। হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করতে ৬৪ বল খেলেন তিনি।

আফিফের মত দারুণ খেলতে থাকা মিরাজও, হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন। ৩৬তম ওভারে দু’টি চারে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মিরাজ। ৫৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে ৭৯ বল খেলেন মিরাজ।

হাফ-সেঞ্চুরির পর তাড়াহুড়া করেননি আফিফ-মিরাজ। উইকেটে টিকে থাকলে, টার্গেটে পৌঁছানো অসম্ভব কিছু না-এমন বিশ্বাস থিতু হয়ে  পড়ে থাকেন তারা। কারন ১২ তম ওভার থেকে জুটি বাঁধেন তারা। ৪৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর ৪৫ ওভার শেষে দলের স্কোর ১৮৭ রানে নিয়ে যান আফিফ-মিরাজ।

আফিফ-মিরাজের দুর্দান্ত জুটিতে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ২৯ রান প্রয়োজন পড়ে টাইগারদের।

ফারুকির করা ৪৬তম ওভার থেকে দু’টি চারে ১৩ রান তুলে নেন আফিফ। ঐ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর পৌঁছে যায় ২শতে।

রশিদের করা ৪৭ তম ওভার থেকে মাত্র ১ রান নিতে পারেন আফিফ-মিরাজ। তবে ফারুকির করা ৪৮তম ওভার থেকে ১১ রান তুলে নেন। শেষ ২ ওভারে ৪ রান প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশ।

গুলবাদিনের করা ৪৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে ৩ রান, আর পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন আফিফ। ১১৫ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৯৩ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। ১২০ বল খেলে ৯টি চারে অপরাজিত ৮১ রান করেন মিরাজ। এটি মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। ম্যাচ সেরা হন মিরাজ। বল হাতে উইকেট না পেলেও, ১০ ওভারে ৩ মেডেনে মাত্র ২৮ রান দিয়েছিলেন মিরাজ।

সম্পর্কিত খবর

পাহাড়ের মানুষেরা বুক উঁচিয়ে পরিচয় দেবেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

gmtnews

জীবন্ত মানুষ কবরে কাটালেন ৭ দিন

Hamid Ramim

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে যশোরে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ

gmtnews

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত