ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কয়েকটি গ্রামে নলকূপ খনন করলেই বেরিয়ে আসছে গ্যাস। সেই গ্যাস দিয়েই স্থানীয়রা বিনা খরচে রান্না করছেন প্রতিদিনের খাবার। অবিশ্বাস্য শোনালেও ঘটনাটি একেবারে বাস্তব, পুরো এলাকাজুড়ে নলকূপের পানি আর আগুনের এই অদ্ভুত মিশ্রণ এখন সাধারণ দৃশ্য হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এসব গ্রামের শত শত টিউবওয়েল থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। সেই গ্যাস দিয়েই গৃহিণীরা রান্নার কাজ করছেন। এতে তাদের কোনো অর্থ খরচ হচ্ছে না। অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার এ সুবিধা নিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ৩৫ বছর আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় প্রথম শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। সেই গ্যাসক্ষেত্রের আশপাশের গ্রামগুলো এখন যেন গ্যাসের জনপদে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে কাচিয়া, টবগী ও হাসাননগরসহ অন্তত পাঁচটি গ্রামে নলকূপ খনন করলেই মিলছে গ্যাস।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস ও রতন হাওলাদার বলেন, আমরা এখানে টিউবওয়েল খনন করলেই গ্যাস বেরিয়ে আসে। সেই গ্যাস আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করি। আমাদের মতো অনেক পরিবারই এভাবে গ্যাস ব্যবহার করছে।
গৃহিণী জান্নাত বেগম ও রোজিনা জানান, গ্যাস ব্যবহার করতে আমাদের কোনো টাকা লাগে না। আমরা বিনা পয়সায় গ্যাস আর পানি দুটোই ব্যবহার করছি।
তবে এসব সংযোগে অব্যবস্থাপনা থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। তারপরও সেই গ্যাস ব্যবহার করে এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি ছোট কারখানাও। দিনের পর দিন এভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় হলেও যেন কারও মাথাব্যথা নেই। ফলে সরকার প্রতিদিনই রাজস্ব হারাচ্ছে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান-উজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন (বাপেক্স) জানিয়েছে, এগুলো পকেট গ্যাস। তাই লোকজন ব্যবহার করছে। তবে বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। বিনা অনুমতিতে গ্যাস ব্যবহার মোটেও ঠিক নয়।
ভোলা বাপেক্সের ডিজিএম শাহাদাৎ হোসেন জানান, ওই গ্যাসের সঙ্গে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের কোনো কূপের সংযোগ নেই। তাই আপাতত অনুমতির প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, ভোলায় বর্তমানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২.৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। এখান থেকে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
