গণভোটকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ‘বিল্ডিং কোড’ হিসেবে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ জন্ম লাভ করবে, নতুন বাংলাদেশের দরজা খুলে দেবে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ৬৪ জেলার জন্য পুলিশ সুপার (এসপি) এবং সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটা শুধু ৫ বছরের সনাতন নির্বাচন তা নয়, এখানে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গণভোট। সেটা হলো বিল্ডিং কোড। সেই বিল্ডিং কোডটা আমরা তৈরি করে দিয়ে যাবো যেটা শতবর্ষ ধরে আমাদের এই দেশকে, এই জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ৫ বছরের নির্বাচন সেটা হলো সনাতন নির্বাচন। তার সঙ্গে আছে শতবর্ষের নির্বাচন (গণভোট), ওই যে বিল্ডিং কোডের কথা বললাম। এই দুই একত্রে, এটা মাহাত্ম্য, এটার গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। নতুন বাংলাদেশ জন্ম লাভ করবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে। এই নির্বাচন আমাদের নতুন বাংলাদেশের দরজা খুলে দিবে।
অতীতের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন বলতে অতীতের কিছু নির্বাচনের কথা চট করে মনে আসে। সবাই দেখেছে সেই নির্বাচনগুলো। কেউ প্রহসনের নির্বাচন বলে, প্রতারণার নির্বাচন বলে, তামাশার নির্বাচন বলে, এগুলো হলো তাদের বিশেষণ। সেখান থেকে আমাদের চলে যেতে হবে বহু ওপরে। কাজেই এই দুরত্বটুকু আমাদের অতিক্রম করতে হবে। লোকে যেন জানে এ পরিবর্তন সম্ভব। তোমাদের মাধ্যমেই সেই পরিবর্তন হবে।
সারা বিশ্বের কাছে আগামী নির্বাচনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় পুনব্যক্ত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাইরের যারা পর্যবেক্ষণে আসবে তারা আমাদের খুঁত ধরার চেষ্টা করবে। আমাদের এটা হয়নি, ওটা ওই ভাবে হলে ভালো হতো বলবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচনটা এমন নির্বাচন হবে, তারা (পর্যবেক্ষক) স্মরণ করবে বাংলাদেশের নির্বাচনটা আমরা দেখেছিলাম এটা এ রকম। তারা নানা দেশে এটা বলবে। এমন একটা নির্বাচন, তারা দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে যাবে তাদের মাথায়। বারে বারে বলবে এই নির্বাচনের মতো নির্বাচন আমরা কখনো দেখি নাই। এখানে যে নির্বাচন দেখে গেলাম সেটা আমাদের স্মরণীয় নির্বাচন, স্মরণীয় অভিজ্ঞতা আমরা এখান থেকে নিয়ে যাবো। সেই ধরনের একটা নির্বাচন আমরা করে যেতে চাই।
আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা সাধারণ নির্বাচন নয়, এটা হলো গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নির্বাচন। গণঅভ্যুত্থাণে যারা শরিক হয়েছিল- এটা তাদের আদর্শ, স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেই বাস্তবায়নটা আমরা এই নির্বাচনের মাধ্যমে করে যাবো।
নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্বপালন করবে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে যারা, তারা হচ্ছে ঐতিহাসিক দায়িত্বপালন করার জন্য। সাধারণ দায়িত্ব পালনের জন্য নয়। ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করার জন্য। এটা ইতিহাসে যেন স্মরণ করে। যারা ঐতিহাসিক এই দায়িত্ব পেয়েছেন এ জন্য আল্লাহর কাছে শোক গোজারি করো। যে আমাদের এই দায়িত্বপালনের সুযোগ দিয়েছে। আমরা সারা জীবনে কি করলাম সেটা বিচারে বসবো এটা যেন এক নম্বরে আসে।
গত ২৪ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লটারির মাধ্যমে ৬৪ জেলার জন্য পুলিশ সুপার (এসপি) নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে লটারি অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সেই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ৬৪ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে।
