চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া বাংলাদেশ আজ সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১এর ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
আবু ধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি সরাসরি দেখাবে গাজী টিভি ও টি-স্পোর্টস।
এই প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। ১৫ বছরে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ১১৬টি ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। কিন্তু কখনোই সংক্ষিপ্ত ভার্সনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেনি বাংলাদেশ।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সফরটি বাতিল করা হয়।
হতাশা নিয়ে সুপার টুয়েলভ পর্ব শুরু করে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার কাছে ৫ উইকেটে ম্যাচ হারে তারা। অন্য দিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে ইংল্যান্ড।
২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই হেরেছিলো ইয়োইন মরগানের দল। কিন্তু দুবাইয়ে হওয়া সুপার টুয়েলভের ম্যাচে লড়াই করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের ৫৫ রানে অলআউট করে দিয়ে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে সফল ছিলো বাংলাদেশ। ব্যাটিং উইকেটে ৪ উইকেটে ১৭১ রান তুলেছিলো তারা। এরপর ম্যাচ জয়ের ভালো সুযোগ ছিলো টাইগারদের। কিন্তু চারিথ আসালঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসের ক্যাচ ফেলেন লিটন দাস। জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত পঞ্চম উইকেটে ৫২ বলে ৮৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা।
আসালঙ্কা ৪৯ বলে অপরাজিত ৮০ রান করে দলের জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন। অথচ ১০ ওভার শেষে লড়াই থেকে ছিটকেই পড়েছিলো শ্রীলংকা। সাকিব আল হাসানের বোলিং নৈপুন্যে ১০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৭৯ রান তুলেছিলো লংকানরা।
লিটনের বাজে ফিল্ডিং ও মাহমুদুল্লাহর দুর্বল অধিনায়কত্বে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। সাকিব-মুস্তাফিজের পর্যাপ্ত ওভার থাকা সত্বেও ইনিংসের মাঝে পার্টটাইম বোলারদের দিয়ে বোলিং করান মাহমুদুল্লাহ। আসালঙ্কা ও রাজাপাকসে, তখনও রানের জন্য লড়াই করছিলেন। ১৩ ও ১৪তম ওভারে দুই পার্টটাইম বোলার মাহমুদুল্লাহ ও আফিফের দুই ওভার থেকে ৩১ রান তুলে শ্রীলংকা।
যদিও মাহমুদুল্লাহ স্বীকার করেছেন, উইকেট বুঝতে ভুল করেছেন এবং দশম ওভারের পর সঠিক কাজ করতে পারেননি। ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
তবে বিশ্ব আসরে ইংলিশদের বিপক্ষে পারফরমেন্সে আত্মবিশ্বাস পেতেই পারে বাংলাদেশ। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে হারার আগে, ২০১১ এবং ২০১৫ সালের আসরে ইংলিশদের হারিয়েছিলো টাইগাররা।
তবে এ জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিতেই পারে ইংল্যান্ড। কারন ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে ইংল্যান্ডের হারের পর পুরো দলকে নতুনভাবে সাজিয়েছে ম্যানেজমেন্ট। ব্যাপক পরিবর্তনের পরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে (ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি) সেরা দল হয়ে উঠে ইংলিশরা।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রানার্স-আপ এবং ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা জয়েরও অন্যতম দাবীদার ইংল্যান্ড।
তবে, আবুধাবির পিচ স্পিনারদের অনুকূলে থাকার কারণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দেখায় অসাধারণ কিছু করার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের।
এখনও পর্যন্ত এই ভেন্যুতে সুপার টুয়েলভের একটি ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ম্যাচটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে জিতে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১১৮ রান করে। জবাবে ১৯ দশমিক ৪ ওভার ম্যাচ জিতে অসিরা। বল হাতে সুবিধা পেয়েছিলো দুই দলের স্পিনাররা। ঐতিহাসিকভাবেই এশিয়ার উইকেটে স্পিনে দুর্বলতা আছে ইংল্যান্ডের।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স আশানুরুপ নয়। এখন পর্যন্ত ১১৬ ম্যাচে ৪৩টি জিতেছে তারা। ৭১ ম্যাচে হার ও দু’টি পরিত্যক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপে ২৮টি ম্যাচ খেলেছে এবং মাত্র সাতটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাছাই পর্ব থেকেই ছয়টি জয় এসেছে, সর্বশেষ জয়টি পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে। টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ দল : মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, নুরুল হাসান সোহান, শামীম হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, রুবেল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, শেখ মাহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ ও তাসকিন আহমেদ।