36 C
Dhaka
May 4, 2024
অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
বাংলাদেশ সর্বশেষ

ব্রতীর ‘জলকন্যা’য় বিশুদ্ধ পানি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চামাগ্রাম, লাহারপুর ও লক্ষীপুর—পাশাপাশি তিনটি গ্রাম। তিন দশক আগে গ্রাম তিনটিতে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক শনাক্ত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসে ‘ব্রতী’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। দীর্ঘদিন গবেষণার পর প্রাকৃতিক স্থলজল বিশুদ্ধকরণের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সংস্থাটি। এক যুগের বেশি সময় ধরে মহানন্দা নদীর পানি বিশুদ্ধ করে ওই তিনটি গ্রামে সরবরাহ করছে ব্রতী।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শারমীন মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘জলকন্যা’। এর কাজ মিষ্টিপানি খুঁজে বের করা এবং আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার তৃষ্ণার্ত মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সহজলভ্য করা। ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তিনটি গ্রামের ৬০০ বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। একেকটি বাড়িতে সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

ব্রতী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য সমস্যার উৎস খুঁজতে গিয়ে ১৯৯৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চামাগ্রামের পানি পরীক্ষা করে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক শনাক্ত করে ইউনিসেফ। পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ওই এলাকার নলকূপ রং করে দেওয়া হয়। কিন্তু পানির সমস্যার সমাধানে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০০৪ সালে ওই এলাকায় জরিপ চালায় ব্রতী। এরপর মহানন্দা থেকে পানি আনার ব্যবস্থা, পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক পানি বিশুদ্ধকরণ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চলে। পরে পাইপলাইনের মাধ্যমে তিনটি গ্রামে পানি সরবরাহ শুরু হয়। এ প্রকল্প ব্রতীর নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয়। 

ব্রতী ড্রিংকিং ওয়াটার সিস্টেম লিমিটেডের মাঠ ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ব্রতীর মাধ্যমে আর্সেনিকপ্রবণ বারঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও লাহারপুর এলাকার ৬০০ বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত পানি দেওয়া হচ্ছে। ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তিনটি গ্রামের গ্রাহকদের বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ১-২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে সংযোগ নেওয়া বাড়ি থেকে মাসে ৩৭৫ এবং ৩-৪ ইঞ্চি আকারের পাইপের জন্য ৪১৫ টাকা ফি আদায় করা হয়। ১৩ বছর ধরে নিজের আয়ে চলছে প্রকল্প। বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ায় প্রকল্পটি লাভজনক হচ্ছে না। এলাকার মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা তিন লাখ লিটার। তবে ব্রতীর উৎপাদনের সক্ষমতা দৈনিক সাত লাখ লিটার।

বরিশালের সাপানিয়ায় পানি নিয়ে কাজ করার সময় আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে অনেক মানুষের মৃত্যু দেখেছেন শারমীন মুরশিদ। কিন্তু নিরাপদ পানির উৎস না থাকায় তাঁদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। তখন থেকেই আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে কাজ করছেন তিনি। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে সুপেয় হিসেবে ভূ–উপরিস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। এ জন্য তাঁরা নদীকে সুস্থ ও সুন্দর রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশ নদীমাতৃক হলেও ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহৃত হয়।

প্রকল্পের উপকারভোগী চামাগ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আল-আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ওই পানি আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত। এর মাধ্যমে এলাকায় পানিবাহিত রোগবালাই অনেকটাই কমে গেছে। আর্সেনিকজনিত রোগও নেই।

শারমীন মুরশিদ বলেন, মহানন্দায় কলকারখানার দূষণ নেই। তাই তাঁরা মহানন্দাকে বেছে নিয়েছেন। পানির মান ঠিক রাখতে আইসিডিডিআরবি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও প্লাজমা প্লাস থেকে নিয়মিত পরীক্ষা করেন। তাঁদের পরিকল্পনা ঠিক আছে কি না, যাচাই করতে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জাপানভিত্তিক পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষা করে নিয়েছেন। এতে তাঁদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। প্রকল্পের গুণগত মান ঠিক রাখতে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আমীর হোসেন খানকে নিয়োগ দিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার বলেন, তিন দশক আগে চামাগ্রামে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিকের অস্তিত্ব পায় ইউনিসেফ। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন পরে হলেও সুপেয় পানির সমস্যার সমাধান করে ব্রতী। তিনি প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছেন, ভালোভাবেই চলছে। তাঁরাও মহানন্দার তীরবর্তী বারঘরিয়া ইউনিয়নে আরেকটি প্রকল্প নির্মাণে উদ্যোগ নিচ্ছেন।

সম্পর্কিত খবর

পুরো ম্যাচ খেলার আশায় দুই দল

Shopnamoy Pronoy

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

gmtnews

শ্রীকৃষ্ণের জীবন উঠে এলো জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রায়

Hamid Ramim

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত