37 C
Dhaka
May 5, 2024
অগ্রবর্তী সময়ের ককপিট
বাংলাদেশ সর্বশেষ

উদ্বোধনের ২ বছর পরেও অগ্রগতি নেই ৫জি সেবার

২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর টেলিটকের মাধ্যমে দেশের ৬টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি সেবা উদ্বোধন করা হয়। সে সময় সরকারের পক্ষে আশা প্রকাশ করা হয়, ২০২২ সালের মধ্যে বেসরকারি অপারেটরগুলো এই সেবা চালু করতে পারবে। সে লক্ষ্যে ওই বছরের মার্চে চার অপারেটরের কাছে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় তরঙ্গও। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় ২ বছর হতে চললেও এখনো সেই উদ্বোধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে পঞ্চম প্রজন্মের (৫জি) প্রযুক্তি সেবা। বরং ৫জি রোল-আউটের জন্য টেলিটকের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল আটকে আছে সেই ২৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প। অপারেটরগুলো ৫জি চালু করার ক্ষেত্রে সিরিয়াস না মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) দিয়ে দিয়েছি। এখন অপারেটরদের দায়িত্ব ডিমান্ড তৈরি করা। মোবাইল অপারেটরগুলো যদি ব্যবহার না দেখায় তাহলে কিভাবে তা বাস্তবায়ন হবে। তবে অপারেটরগুলো বলছে, তারা ৫জি’র জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ইকো-সিস্টেম প্রস্তুত না হলে কোন কাজ হবে না। সল্যুশন ও সফটওয়্যার নির্ভর এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হলে শুধু অপারেটরদের ওপর নির্ভর করলেও হবে না অন্যদেরও বিনিয়োগ করতে হবে। তারা জানান, ইতোমধ্যে ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করতে সিটি করপোরেশন এবং কিছু শিল্প কারাখানায় ৫জি চালু করতে প্রস্তাব দেয়া হলেও তারা বিনিয়োগ করতে রাজি হয়নি।
প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫জি প্রযুক্তি ৪জি প্রযুক্তির চেয়ে ২০ গুণ বেশি গতিতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বলা হচ্ছে, ৫জি প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা বদলে দেবে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরও শক্তিশালী হবে। স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ সহজ হবে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকা রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রযুক্তির ব্যবহার। সেন্সরগুলোর ডাটা স্থাপিত হবে ট্রাফিক লাইটে, ঘরে, অফিসে, থানায়, পাবলিক পার্কে। ফলে নগর ব্যবস্থাপনা হবে আরো সহজ।

এছাড়া বিগডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ৫জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ৫জি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার উন্নয়নের ফলে গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও রোগী শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। চাইলে বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎকের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারবেন। দূর শিক্ষণ বা অনলাইন ক্লাসরুমের ফলে দূরগ্রাম বা প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে। ৫জি নেটওয়ার্কে গেমিংয়ে কোনো প্রকার ল্যাগ ছাড়াই খেলা যাবে। বাফারিং ছাড়াই অনলাইনে হাই রেজ্যুলেউশন বা ৪০০ ভিডিও দেখা যাবে। একই সঙ্গে ডিস্টার্ব ছাড়াই আরো উন্নত ও স্বচ্ছভাবে ভিডিও কল করা যাবে।

প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার অভিজ্ঞতা দেওয়ার কথা বলেই ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ৫জি’র যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবার উদ্বোধন করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ছয়টি স্থানে এই পরিষেবা চালু করে। স্থানগুলো হলো- গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, বাংলাদেশ সচিবালয়, সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২ এবং ঢাকার শেরেবাংলা নগর। পরবর্তীতে ২০২২ সালের মার্চে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে নিলামের মাধ্যমে তরঙ্গ বিক্রিও করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি। নিলামে দুটি ব্যান্ডের ২২০ মেগাহার্টজের মধ্যে ১৯০ মেগাহার্টজ কিনে চার মোবাইল ফোন অপারেটর। এতে সরকারের আয় হয় ১০ হাজার ৫৪৫ কোটি ৭০ হাজার টাকা। ‘স্পেক্ট্রাম অকশন-২০২২’ শীর্ষক নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ১৫ বছরের জন্য ৬ মিলিয়ন ডলার। তবে তা বিক্রি হয়েছে ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারে। নিলামের জন্য ২.৩ গিগাহার্টজের ১০টি ব্লক এবং ২.৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ১২টি ব্লক নির্ধারণ করা হয়। প্রতি ব্লকে ছিল ১০ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ। নিলামে ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে সমানসংখ্যক ৬০ মেগাহার্টজ করে ১২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে গ্রামীণফোন ও রবি। আর বাংলালিংক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ৪০ মেগাহার্টজ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক একই ব্যান্ডের ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে। গ্রামীণফোনের কাছে এখন মোট তরঙ্গ আছে ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্টজ, রবির ১০৪ মেগাহার্টজ, বাংলালিংক ৮০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটক ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আবু সাইদ খান জানান, ৫জি সেবা চালুর সিদ্ধান্তটি বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়নি। এটি মূলত একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে করদাতাদের টাকার অপচয়। দুর্বল ৪জি সেবার উন্নয়ন না করে ৫জি নিয়ে কথা বলা একটি লোক দেখানো কাজ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫জি ব্যক্তির জন্য নয়, এটি হবে সমাজের জন্য। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সব সেবা চলে যাবে। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্প-গার্মেন্টস শিল্পের মতো শিল্প কারাখানায়। এজন্য ইকোসিস্টেম উন্নত করতে হবে। প্রচুর ৫জি টাওয়ার লাগবে, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।

৫জি নেটওয়ার্ক সেবা ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম দক্ষিণ কোরিয়ায় চালু হয়। এরপর এখন পর্যন্ত ৬১টি দেশে এই সেবা চালু হয়েছে।
পরীক্ষামূলক উদ্বোধনের এতোদিন পরেও কেন ৫জি চালু হচ্ছে না জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা অপারেটরদের স্পেকট্রাম দিয়ে দিয়েছি। এখন কাজ হচ্ছে তাদের। তারা মার্কেটে ডিমান্ড তৈরি করবে। তারা যদি ব্যবহার উপযোগীতা দেখাতে না পারে তাহলে মানুষ কেমনে আগ্রহী হবে? মানুষকে তো এর সুবিধা, ব্যবহার উপযোগিতা বোঝাতে হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এর মাধ্যমে স্পেশাল ইকোনমিক জোনগুলোতে ৫জি উপযোগী ফাইবার সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। যদি কারখানাগুলো চায় আমরা তাদের সেই সেবা দিতে পারবো।

৫জি’র জন্য ইকো-সিস্টেম এখনো প্রস্তুত নয় জানিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, আমরা সবগুলো সাইট ফাইভজি করে ফেলেছি। কিন্তু এখন ডিভাইস ও সল্যুশন লাগবে। কারণ এই প্রযুক্তিটি সল্যুশন ও সফটওয়্যার নির্ভর। ইকো-সিস্টেম রেডি হলে আমরা দ্রুত এই সেবা দিতে পারবো।

একটি অপারেটরের কর্মকর্তা জানান, তারা পোর্টের জন্য সরকারের কাছে ধ্বর্ণা দিলেও সরকার এতে আগ্রহী না। ঢাকা সিটিকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে প্রস্তাব দেয়া হলে তারা অনাগ্রহী। কয়েকটি কারখানাকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ৫জি প্রযুক্তিতে যাওয়ার জন্য কিন্তু তারা জানিয়েছেন, প্রযুক্তির চেয়ে শ্রমিক সস্তা তাই এখনই তারা যেতে পারবে না। তবে সিটি করপোরেশন ও কারখানাগুলো জানিয়েছে তারা নিজেরা কোন বিনিয়োগ করতে পারবে না, যদি মোবাইল অপারেটর তাদের নিজের বিনিয়োগে করে তাহলে তারা সম্মত আছেন।

বিটিআরসির কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫জি চালু করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। অপারেটরদেরকে হেভি ইক্যুইপমেন্ট বসাতে হবে। যে পরিমাণ ব্যয় হবে সে তুলনায় গ্রাহক নেই। এখন গ্রাহক তৈরি করতে হবে, চাহিদা তৈরি করতে হবে। কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গরূপে ৫জি চালু করা যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের শেষ কিংবা ২০২৫ সালের শুরুতে করা সম্ভব হবে।

৫জি’র জন্য একটি সমন্বিত গাইডলাইনের দাবি জানিয়ে আসছে অপারেটরগুলো সেটির বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।

৫জি বাস্তবায়নে অন্যতম অংশীদার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রস্তুত আছে জানিয়ে তাদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, এখনো কেউ এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। কারণ রিটার্ন আসবে না। তবে শহর কেন্দ্রীক এ সেবা চালু করার মতো সুযোগ আছে বলেও মনে করেন তিনি।

সম্পর্কিত খবর

ফিরেই ‘দ্রুততম’ অর্ধশতক হেডের, ১০ ওভারে ২১ বাউন্ডারি অস্ট্রেলিয়ার

Shopnamoy Pronoy

রমজানে আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় বিএনপির সমালোচনা প্রধানমন্ত্রীর

gmtnews

যদি-কিন্তু থাকবেই, শ্রীলঙ্কা ভালো খেলেই জিতেছে: সাকিব

Hamid Ramim

মন্তব্য করুণ

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই অপ্ট আউট করতে পারেন। স্বীকার করুন বিস্তারিত